চিকিৎসকরা যখন বক্ষের অস্থিকে কেটে হৃৎপিণ্ডকে উন্মুক্ত করেন এবং হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন কমিয়ে অপারেশনের মাধ্যমে হার্টের সমস্যাগুলো দূরীভূত করেন তাকে ওপেন হার্ট সার্জারি বলে। স্টেন্ট বা রিং এবং এনজিওপ্লাস্টির মাধ্যমে যখন সমস্যা সমাধান না হয় তখনই এই কঠিন সমস্যা দূর করার জন্য এই অপারেশন করা হয়। টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক Dr. Wilfred G. Bigelow (1950) সর্বপ্রথম ওপেন হার্ট সার্জারি প্রয়োগ করেন।
যেসব কারণ ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়
ওপেন হার্ট সার্জারি নিম্নলিখিত কারণে হতে পারে। যথা
১. হৃৎপিণ্ডে কোনো জন্মগত ত্রুটির কারণে।
২. করোনারি ধমনিতে একাধিক ব্লকেজ বা যেকোনো ধর্মনি ১০০% ব্লকেজ থাকার কারণে এই অপারেশন করা হয়। এই প্রক্রিয়াকে করোনারি বাইপাস বা CABG (Coronary Artery Bypass Graft) বলে।
৩. হৃৎপিণ্ডের কোনো কপাটিকার মেরামত বা প্রতিস্থাপন করা।
৪. হৃৎপিণ্ডে কোনো যন্ত্র বা পেসমেকার বসানো।
৫. হৃৎপিণ্ড নষ্ট হয়ে গেলে দাতার হৃৎপিণ্ড দ্বারা প্রতিস্থাপন করা।
ওপেন হার্ট সার্জারির প্রকারভেদ
ওপেন হার্ট সার্জারিতে চারটি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। যথা:
১. অন-পাম্প সার্জারি (On pump surgery) এই ধরনের সার্জারিতে হৃৎপিণ্ডের মাধ্যমে রক্ত প্রবাহ বন্ধ রাখা হয়। এই সময় হার্ট লাং মেশিনের (heart-lung machine) সাহায্যে সমগ্রদেহে রক্ত সঞ্চালন অব্যাহত রাখা হয়। মেশিনটিতে সংরক্ষণ প্রকোষ্ঠ, O2 প্রকোষ্ঠ বা বাক্স, পাম্প মেশিন ও টিউব থাকে। টিউবের একপ্রান্ত ডান অলিন্দের সাথে ও অপর প্রান্ত সিস্টেমিক মহাধমনির সাথে লাগানো হয়। উক্ত মেশিনের সাহায্যে হার্টের ডান অলিন্দ থেকে রক্ত একটি কক্ষে গ্রহণ করা হয় এবং সেখান থেকে রক্ত O2; সমৃদ্ধ বাক্সে প্রবেশ করানো হয়। O2বাক্সের মধ্য দিয়ে পার হওয়ার সময় লোহিত কণিকা (RBC) O2 গ্রহণ করে এবং অন্য একটি কক্ষে প্রবেশ করে। সেই কক্ষ থেকে পাম্প দ্বারা রক্ত শরীরের সব অঙ্গে পৌঁছে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে প্রথমে মেশিনের রক্ত নল দিয়ে মহাধমনিতে (aorta) প্রবেশ করে এবং পরবর্তীতে রক্ত রক্তনালি দিয়ে শরীরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
২. অফ-পাম্প সার্জারি (Off pump surgery or Beating heart) : এইক্ষেত্রে হার্ট লাং মেশিন ব্যবহার করা হয় না। এই ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডকে সচল রেখে সার্জারি করা হয়। একে অবক্যাব (opcab) সার্জারি বলে।
৩. মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারি (Minimally invasive surgery) : এক্ষেত্রে বুকের খুব অল্প অংশ কাটা হয়। এক্ষেত্রে হার্ট লাং মেশিন ব্যবহারিত হতে পারে আবার নাও হতে পারে। একে মিডক্যাব (MIDCAB-Minimally Invasive Direct Coronary Artery Bypass) সার্জারি বলে ।
৪. রোবট-সহযোগী সার্জারি (Robot-assisted surgery) : এ ধরনের সার্জারিতে রোগীর গায়ে খুবই সামান্য একটি কাটা দাগ থাকে। এ ধরনের সার্জারি অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও সঠিক হয়ে থাকে। কারণ এ পদ্ধতিতে শল্যচিকিৎসকরা বিশেষ কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত রোবটিক হাত (যান্ত্রিক হাত)-এর সাহায্যে অস্ত্রোপচার করেন। চিকিৎসক কম্পিউটার সার্জারির ত্রিমাত্রিক দৃশ্য দেখতে পান এবং কাজ সম্পন্ন করেন।
1 Comments
Good
ReplyDelete