Human body and machine
প্রাত্যহিক জীবনের বিভিন্ন প্রয়োজনে আমরা নানা ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করি। যেমন- অটোমোবাইল, রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন, বাষ্পীয় ইঞ্জিন, অন্তর্দহন ইঞ্জিন ইত্যাদি। মানবদেহকে অনেকে একটি যত্ররূপে অভিহিত করে থাকেন। যদিও মানবদেহ আসলে যন্ত্র নয়, তবু এটি অনেকাংশে যন্ত্রের ন্যায় আচরণ করে। যন্ত্রের মতো এটিও অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ বা অঙ্গ নিয়ে গঠিত, যার একটির অভাবে বা বিকল হয়ে যাওয়ায় সম্পূর্ণ দেহের কর্মকাণ্ড বিঘ্নিত হয়। যন্ত্রের প্রত্যেকটি অংশ যেমনিভাবে বিশেষ কাজ সম্পন্ন করে, তেমনিভাবে মানবদেহের প্রত্যেকটি অঙ্গ আলাদা আলাদা কাজে নিয়োজিত। মানবদেহের প্রত্যেকটি অঙ্গ একে অন্যের সাথে আসম্পর্কিত প্রত্যেকটি অঙ্গ নিজস্ব গতিতে চলে, কিন্তু সবগুলো কাজই সুনির্দিষ্ট এবং এদের মধ্যে পূর্বনির্ধারিত সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণেই মানবদেহ মানবসৃষ্ট সবচেয়ে জটিল যন্ত্রের সমতুল্য।
Brain |
মানবদেহের এমন অংশগুলোর মধ্যে রয়েছে হৃত্যত্র, বৃক্ক, ফুসফুস, যকৃত ইত্যাদি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, হৃৎপিন্ড আসলে একটি স্বয়ংক্রিয় পাম্প, যা বাইরের কোনো উদ্দীপনা ছাড়াই নিজস্ব বৈদ্যুতিক সিগন্যাল দ্বারা সমগ্রদেহে রক্ত সঞ্চালন করতে সক্ষম। অপরদিকে, বৃক্ক একটি বিশেষ ছাঁকন যত্র যা মানুষের শরীরের নাইট্রোজেনযুক্ত বর্জ্য পদার্থ অপসারণ করে থাকে। এরকম অসংখ্য ছোট ছোট যন্ত্রের কাজের সমন্বয়ের ফলে সম্পূর্ণ মানবদেহ সচল থাকে। মানবদেহ একটি জৈবযন্ত্র স্বরূপ। যন্ত্র দ্বারা কাজ করার জন্য শক্তির প্রয়োজন। বিভিন্ন ইঞ্জিনে আমরা পেট্রোল, ডিজেল, সি.এন.জি ইত্যাদি জ্বালানি ব্যবহার করে রাসায়নিক শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করি। ঠিক তেমনিভাবে, খাদ্য গ্রহণ ও শ্বসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানবদেহও রাসায়নিক শক্তিকে তাপশক্তি ও যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে। সুতরাং মানবদেহ আসলে একটি জৈবিক যন্ত্রের মতো। কিন্তু অনেক দিক দিয়ে মানবদেহ মানবসৃষ্ট জটিলতম যন্ত্রের চেয়েও বিস্ময়কর। মানবদেহ এমন কিছু কাজ করতে পারে, যা কোনো যন্ত্রের পক্ষে করা সম্ভব নয়। যেমন মানুষের দেহ একটি মাত্র কোষ থেকে উৎপত্তি লাভ করে। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এই একটি কোষই পূর্ণাঙ্গ মানবদেহে পরিণত হয়, যা লক্ষ কোটি কোষ দ্বারা গঠিত। কিন্তু কোনো যন্ত্রেই এমনটি ঘটে না। কখনো কখনো শরীরের একটি মাত্র অংশ বিকল হলে সমগ্র মানবদেহের কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যায়। যেমন- হৃৎপিণ্ডের ক্রিয়া থেমে গেলে শরীরের অন্যান্য সকল অঙ্গগুলোর কর্মকান্ডও রুদ্ধ হয়ে যায় এবং খুব দ্রুত মস্তিস্কের ক্রিয়াও থেমে যায়।
1 Comments
nice
ReplyDelete